পাঁচ বছরেও নির্মান কাজ শেষ হয়নি মেহেরপুর নার্সিং কলেজের
পাঁচ বছরেও শেষ হয়নি মেহেরপুরে নার্সিং কলেজ নির্মানের কাজ , সঙ্গে বেড়েছে ব্যয়ও। প্রজেক্টে গিয়ে দেখা যায় ঢালাই-প্লাস্টারসহ নানা কাজ বাকি।
মেহেরপুরে মানুষের স্বাস্থ্যসেবার মান উন্নয়নে সে সময়ের জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেনের প্রচেষ্টায় ২০১৯ সালে নার্সিং কলেজ নির্মাণের কাজ শুরু হয়। পাঁচ বছরে প্রকল্পটির মেয়াদ বেড়েছে তিন দফা, সঙ্গে বেড়েছে ব্যয়ও। শুরুতে এর ব্যয় ধরা হয়েছিল ৩০ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। পরে তা বাড়িয়ে করা হয়েছে ৩৯ কোটি ৬০ লাখ টাকা।
স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, তৃতীয় বারের মতো বাড়ানো কাজের মেয়াদ শেষ হয়েছে চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে। এখনো ৪০ শতাংশ কাজ বাকি রয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। সিরাজগঞ্জের পিয়াস কনস্ট্রাকশন নামের একটি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান এ কাজ করছে।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা আবদুল মালেক বলেন, এই নার্সিং কলেজটি নির্মাণের শুরুতে দেশে করোনা দেখা দেয়। ওই অবস্থায় নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখতে হয়। পরে নির্মাণ সামগ্রীর দাম বেড়ে যায় অনেকাংশে। বড় লোকসানের আশঙ্কায় কাজ ধীরগতিতে করা হচ্ছে। তবে বেশির ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। বাকি কাজও চলতি মেয়াদে শেষ করা হবে।
স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর ও মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, অভিজ্ঞ শিক্ষকের মাধ্যমে যোগ্যতা সম্পন্ন নার্স তৈরি করতে একটি নার্সিং কলেজ তৈরির প্রস্তাব দিয়েছিল মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতাল। সরকার এ প্রস্তাবে সাড়া দেয়। ২০১৯ সালে ১৮০ আসন বিশিষ্ট নার্সিং কলেজ নির্মাণের কাজ শুরু হয়। প্রথমে প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল ৩০ কোটি ৬০ লাখ টাকা। তৃতীয় বারের মতো কাজের মেয়াদ শেষ হয়েছে চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে। এখনো অনেক কাজ বাকি। প্রকল্পটির ব্যয়ও বেড়েছে। শুরুতে ব্যয় ধরা হয়েছিল ৩০ কোটি ৩৯ লাখ টাকা, পরে তা বাড়িয়ে করা হয়েছে প্রায় ৩৯ কোটি ৬০ লাখ টাকা। ব্যয় আরও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
নির্মাণাধীন কলেজ প্রাঙ্গণে গিয়ে দেখা যায়, চারতলা কলেজ ভবনের ভেতরের প্লাস্টার করা হয়নি। জানালার ফ্রেম নেই। বাথরুমের কাজ এখনো হয়নি। মেঝেতে ধুলার আস্তর পড়ে রয়েছে। বাইরের দেয়ালের প্লাস্টার হয়নি। মাত্র পাঁচজন শ্রমিক কাজ করছেন ধীর গতিতে। শিক্ষার্থীদের আবাসিক ভবনের দশা আরও করুন। দীর্ঘদিন যাবত অব্যবহারি থাকার কারণে দেয়াল গুলো এর মধ্যে স্যাঁতসেঁতে হয়ে পড়েছে। শিক্ষার্থীদের আলাদা আলাদা কক্ষ করা হয়নি।
এখানের বাথরুমের কাজও করা হয়নি। এ সময় একজন ভ্যানচালক কয়েকটি কাচের জানালা নিয়ে প্রবেশ করেন সেখানে। জানালাগুলো কোথায় লাগানো হবে, তা তিনি জানেন না।
এ সময় দেখা যায়, নির্মাণ শ্রমিকেরা কলেজ ভবনের সামনের দুই পাশে দেয়াল তৈরির কাজ করছেন। এ সময় এক নির্মাণ শ্রমিক বলেন, ‘ঠিকাদারের নির্দেশমত কাজ করতে হয়। তারা যে ভাবে বলেন, ঠিক ওই রকম কাজ করতে হচ্ছে। মাঝে মধ্যে চুয়াডাঙ্গা থেকে কয়েকজন লোক আসে কাজ দেখে চলে যান।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রকল্প দেখ ভালের দায়িত্বরত আবদুল মালেক জানান, পিলার ও চারতলা ছাদ ঢালাইয়ের কাজ শেষ হলে বৈদ্যুতিক সংযোগ, পানির লাইন, গ্রিলের কাজ, মেঝেতে টাইলসহ অন্যান্য কাজ করা হবে।
মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালের তত্বাবধায়ক হাসিবুস সাত্তার অভিযোগ করে বলেন, একটি কলেজের নির্মাণ কাজে যদি পাঁচ বছর লেগে যায়, তাহলে কীভাবে দ্রুত উন্নয়ন সম্ভব। এত দিন এই এলাকার শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা শেষ করে কাজে যোগ দিতে পারতেন। জেনারেল হাসপাতাল আরও দক্ষ নার্স পেতো ।
এ বিষয়ে চুয়াডাঙ্গা স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপসহকারী প্রকৌশলী আবদুল কাদের বলেন, তাঁরা তাগিদ দিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু ঠিকাদার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে সময় বাড়িয়ে নেন। তাঁরা আবারও ঠিকাদারকে কাজ দ্রুত শেষ করার তাগাদা দেবেন।
ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন ড. অলোক কুমার দাস বলেন , একটি লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে নার্সিং কলেজ নির্মাণ করা হচ্ছে। কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের গাফিলতিতে সেই লক্ষ্য পূরণ করা যাচ্ছে না। আমি চায় কাজটি দ্রুত শেষ হোক এবং এলাকার মানুষ এর সুফল ভোগ করুক।