মেহেরপুরে আরও ১৬০ ভুমিহীন পরিবার পাচ্ছে নতুন ঘর ও জমি।

একটি পাকা ঘর পাওয়া আমাদের কাছে সপ্নের মত।

113

মেহেরপুর প্রতিনিধি: একটি ঘর না থাকার কষ্টের জীবন শেষ হতে যাচ্ছে মেহেরপুরের ভূমিহীন ও গৃহহীন মানুষের। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার হিসেবে আধা পাকা ঘর এবং জমি পাচ্ছেন মেহেরপুরের আরো ১৬০টি পরিবারের মানুষ।

একটি থাকার জায়গার অভাবে কতদিন যে রোদে পুড়েছি আর বৃষ্টিতে ভিজেছি তার ঠিক নেই। কত রাত যে নির্ঘুম কাটিয়েছি তার কোন হিসেব নেই। এখন যেন মনে হচ্ছে স্বর্গে আছি। আমাদের জন্য একটি পাকা ঘর পাওয়া সপ্নের মত। খেজুর পাতার পাটি বুনতে বুনতে কথা গুলো বলছিলেন ষাটোর্ধ সুমেলা বেগম।

১ মেয়ে ও দুই ছেলে নিয়ে বসবাস করা মালা খাতুন বলেছেন, স্বামী অন্যত্র চলে গেছে অনেক আগেই। বাচ্চাদের নিয়ে দুশ্চিন্তায় ঘুম হারাম হয়ে যেতো। জরাজীর্ণ একটি ঘরে বসবাস করতাম। নতুন একটি ঘর পেয়ে আমি যেন আনন্দে আত্মহারা।

মেহেরপুর সদর উপজেলার রঘুনাথপুর গ্রামে তৈরি করা হয়েছে সেমি পাকা ১৬০ টি ঘর। ১৬০টি পরিবারের প্রায় সাড়ে ৫শ সদস্য সেখানে বসবাস করছেন। আগামী ১০ জুন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অনলাইনের মাধ্যমে উদ্বোধন করবেন বলে জানা গেছে। সেদিন তাদের হাতে আনুষ্ঠানিকভাবে তুলে দেয়া হবে ঘরের দলিল। তবে আগে থেকেই বসত করতে শুরু করেছে ভূমিহীনরা। দুটি কক্ষ, একটি বাথরুম, বারান্দা ও লাল-সবুজ রঙের টিনের ছাউনি রয়েছে ঘর গুলোতে।

সদর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসার নাহিদা ইসলাম জানান, ৪ কোটি ৮০ লাখ টাকা ব্যায়ে সদর উপজেলার রঘুনাথপুর আশ্রয়নে নির্মাণ করা ১৬০ টি ঘর। প্রতিটি ঘরের নির্মাণ ব্যায় ধরা হয়েছে ৩ লাখ টাকা করে। এছাড়া পাকা রাস্তা, পানি, বিদ্যুৎ ব্যবস্থাসহ বাচ্চাদের পড়াশোনার জন্য নির্মান করা হয়েছে একটি স্কুলও।

মেহেরপুর শহর থেকে ৫ কিলোমিটার পশ্চিমে রঘুনাথপুর গ্রামে নির্মাণ করা হয়েছে ঘর গুলো। লাল-সবুজ রঙের টিনের ছাউনিতে ছেয়ে গেছে পুরো গ্রাম। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, প্রায় সাড়ে ৫শ জন ভুমিহীন নতুন ঘরে বসবাস করছেন। ঘরের সাথেই গরু-ছাগল পালন করছেন কেও। কেও করছেন নকশীকাঁথার কাজ আবার ঘরের সামনে কেও করেছে সবজীর বাগান।

নতুন ঘর পেয়ে উচ্ছসিত সেখানকার বাসিন্দারা। কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীকে। সেই সাথে ধন্যবাদ জানিয়েছেন মেহেরপুর ১ আসনের সাংসদ ও জনপ্রশাসন মন্ত্রী ফরহাদ হোসেনকে। নতুন ঘর পেয়ে তাদের চোখে ছিল আনন্দাশ্রু।

ছবেদা খাতুন নামের সুবিধাভোগী বলেন, এক সময় জরাজীর্ণ ঘরে বসবাস করতাম। রোদ-বৃষ্টি ছিল আমাদের নিত্যসঙ্গী। এমন একটি সুন্দর ঘরে জীবনের শেষবেলাতে এসে বসবাস করবো এটা সপ্নেও ভাবিনি। এটা যেন আমাদের কাছে সপ্নের মতো।

হত দরিদ্র মানুষগুলো বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তরিকতায় পেয়েছেন নতুন পাকা বাড়ি। তাদের কৃতজ্ঞতার শেষ নেই। সবুর আলী নামের একজন বলেন, আমাদের কোন জমিজায়গা নেই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছায় আমরা একটি নতুন আধাপাকা ঘর পেয়েছি। এক ছেলে, দুই মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে বেশ ভালো আছি।

শেখ হাসিনামেহেরপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ডা.কাজী নাজিব হাসান বলেন, কিছুদিন পূর্বে রঘুনাথ আশ্রয়নে সেখানকার বাসিন্দারা খুবই জরাজীর্ণ অবস্থায় বসবাস করতো । পরে জনপ্রশাসন মন্ত্রী মহোদয়ের প্রচেষ্টায় পুরো গ্রামেই নির্মান করা হয়েছে নতুন ঘর। তিনি আরো বলেন আমি ভাগ্যবান বর্তমান সরকারের চমৎকার এ আয়োজনে কাজ করতে পেরে। এখন রাস্তাগুলো পাকাকরণ করা হবে । এখানকার বাসিন্দাদের বিভিন্ন প্রকার প্রশিক্ষণ দিয়ে স্বনির্ভর করার জন্য সমবায়ের মাধ্যমে লোন দিয়ে তাদের কর্মসংস্থ্যানের ব্যবস্থা করা হবে যাতে আবাসনের পাশাপাশি অর্থনৈতিক মুক্তিও মেলে। কৃষি বিভাগের মাধ্যমে এখানকার খালি জয়গায় তাদের দিয়ে সব্জি চাষ করানো হবে যাতে তাদের পুষ্টি চাহিদা মেটে ও বাজার খরচ কমে যায়। এখানকার প্রাথমিক বিদ্যালয়টি জাতীয়করনের কাজ চলছে। এখানকার সকল বাড়িতে বিনামূল্যে বিদ্যূত দেয়া হয়েছে। সকলের জন্য নিরাপদ পানকরার পানির ব্যবস্থা করা হয়েছে।

জনপ্রশাসন মন্ত্রী অধ্যাপক ফরহাদ হোসেন বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শুধু মেহেরপুরে নয় সারা বাংলাদেশে গৃহীন ভূমিহীন ছিন্নমূল মানুষদের একটি করে আধাপাকা ঘর ও জমির মালিকানা দিচ্ছেন। তিনি তাদের নিরাপদে থাকার জায়গা করে দিচ্ছেন। সেখানে তাদের ছেলে মেয়েরা লেখাপড়া করতে পারবে। সেখানে বিদ্যুৎ, রাস্তা ও পানির ব্যবস্থা করে দেয়া হচ্ছে। নতুন ঘর পেয়ে তারা খুবই খুশি এবং আমরা খোঁজ নিচ্ছি যদি আরো ভূমিহীন থাকে পরবর্তীতে আমরা তাদেরকেও নতুন ঘরের ব্যবস্থা করে দিব। এ ঘরগুলো আগামী ১০ জুন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করবেন।

এই বিভাগের আরও সংবাদ